বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সোনাদিয়া দ্বীপে প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণে ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভয়েস প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের মহেশখালীর প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপের প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণ ও আগুনে গাছপালা-জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি নেতা আলমগীর চৌধুরী ও যুবলীগ নেতা এড. শেখ কামালসহ এজাহারনামীয় ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মামলায় অধিকাংশ আসামি নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী।

তবে এই মামলায় প্যারাবন কাটায় জড়িত প্রকৃত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম না থাকায় সমালোচনাও হচ্ছে।

রোববার বিকেলে মহেশখালী থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট মো. আবদুছ ছালাম।

মামলার ২০ আসামি হলেন মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী (৩৭), কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামাল (৪০) ও তাঁর ছোট ভাই শেখ আলমগীর (৩০), কুতুবজোম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম (৫০) ও তাঁর ভাগনে আবদুল মোনাফ (৩০), স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইমতিয়াজ উদ্দিন (৩২), আওয়ামী লীগের সদস্য আজিজুল হক (৩৮), সোনাদিয়া দ্বীপের ইউপি সদস্য একরাম মিয়া (৩০), মোহাম্মদ শফিউল আলম (৩৮), জাহাঙ্গীর বাদশাহ (৪০), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (৩২), মোহাম্মদ নকিব (৩০), মোহাম্মদ শফি (৪২), নুরুল আফছার (৫০), নুর হোসেন (৫০), আবু তাহের (৪৫), মোহাম্মদ হোসেন (৫৫), কক্সবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের ফুপাতো ভাই মোহাম্মদ শমসের উল্লাহ (৩৫), ঘটিভাঙা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক (৪০) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা আনোয়ার (৪৫)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাইছার হামিদ বলেন, রোববার বিকেলে সোনাদিয়া দ্বীপে প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণের অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে।

পরিবেশ আদালত আইন ২০১০ অনুসারে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করার পর পরবর্তী সময়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার ২ নম্বর আসামি ও ইউপি চেয়ারম্যান শেখ কামাল বলেন, সোনাদিয়ায় তাঁর নামে কোনো চিংড়িঘের নেই। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে তিনি সোনাদিয়ার প্যারাবন নিধন করে চিংড়িঘের নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চিংড়িঘের উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন। বন বিভাগ ও বেজাকে নিয়ে চিংড়িঘেরে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন। অথচ এলাকার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁর নামটি এজাহারে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।

মামলার প্রধান আসামি ও বিএনপি নেতা আলমগীর চৌধুরী বলেন, তিনিও প্রতিহিংসার শিকার। বাবার কেনা একটি চিংড়িঘের ছাড়া সোনাদিয়ায় তাঁর কোনো চিংড়িঘের নেই।

গত বৃহস্পতিবার ‘প্যারাবন পুড়িয়ে নতুন চিংড়িঘের’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপে নতুন করে অন্তত এক হাজার একরের প্যারাবনের কেওড়া ও বাইনগাছ ধ্বংস করে তৈরি হয়েছে সাতটি চিংড়িঘের। এবার প্রকাশ্যে পেট্রল ঢেলে গাছপালা পুড়িয়ে এই ঘেরগুলো করা হয়েছে।

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৩ হাজার একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে সেখানে নির্মিত হয়েছিল ৩৭টি চিংড়িঘের।

এসব ঘের উচ্ছেদ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও গত ছয় মাসে তা কার্যকর হয়নি। গত দুই দিনে কয়েক শ একর প্যারাবন দখল করে আরও চারটি চিংড়িঘের নির্মাণ করা হয়। এখন চিংড়িঘেরের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৮।

মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন (ইসিএ) এলাকা প্রাকৃতিক প্যারাবন ধ্বংস, বাঁধ নির্মাণ, চিংড়িঘের ও লবণ মাঠ তৈরি, প্রাণী, উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতিকারক কার্যাবলি, ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে আসামিরা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. জমির উদ্দিন বলেন, দ্রুততম সময়ে মধ্যে মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্যারাবন দখল করে চিংড়িঘের নির্মাণের সঙ্গে জড়িত কাউকে পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION